ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিমানবন্দর থানা পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘হর্ন বন্ধ করা আমার দায়িত্ব নয়, দায়িত্ব হচ্ছে আইনটাকে প্রয়োগ করা’ শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন ট্রাম্প-মোদি এসে কিছু করে দিয়ে যাবে না: মির্জা ফখরুল জাপাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে ষড়যন্ত্র চলছে: জি এম কাদের এই দিনে ভারতের ১৬ সেনাকে চিতায় পাঠায় সাহসী বিডিআর জওয়ানরা : ইলিয়াস আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ আরেকটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা আসার সকল রাস্তা বন্ধ করবো: নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ভারত : জয়সওয়াল রাস্তায় নামলে অনেক উপদেষ্টার দেশ ছাড়তে হবে : নুর

পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন নবীনগরের চাষিরা

পান বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসবসহ বিয়ে-শাদিতে পান-সুপারির কদর আদিকাল থেকে।পান দিয়ে চলে মেহমানদারীতে আপ্যায়নও। যুগের সাথে অনেক কিছুর চাহিদা কমে গেলেও রসনা বিলাসের অন্যতম এই উপকরণটির চাহিদা বিন্দুমাত্র কমেনি এখনো।

একটা সময় পান চাষের ব্যাপক চাহিদা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায়। এলাকার চাষিরা পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং তারা সফলতার মুখও দেখেন। সময়ের সাথে সাথে এ উপজেলায় পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি প্রণোদনার অভাবে দিন দিন কমে যাচ্ছে পান আবাদের পরিমাণ।

জানা যায়, একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি অপরদিকে চাষিদেরকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সুস্বাদু পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের বহু পরিবার আদিকাল ধরে পান চাষে জড়িত ছিলো। এ পান স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয় ছিল। এর চাহিদাও প্রচুর। সরকারি প্রণোদনা বা সঠিক পরিকল্পনায় এ অঞ্চলে পানের পরিকল্পিত চাষাবাদ ঘুরিয়ে দিতে পারে স্থানীয় পান চাষিদের ভাগ্যের চাকা, এমনকি জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একটা সময় শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীঘর, শাহবাজপুর এবং শ্যামগ্রামে পানের প্রায় ৪০-৪৫ টি পানের বরজ থাকলেও এখন তা কমে বর্তমানে এ এলাকায় মাত্র ৭-৮ টি পানের বরজের দেখা মিলেছে। পূর্ব পুরুষের পেশা হিসেবে এখনো যারা পানের বরজ নিয়ে আছেন তারাও দিন দিন এ পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, একটা সময় দেখতাম আমাদের এলাকায় পান চাষ করতে চাষিরা বেশ আগ্রহ দেখাতো। ঐসময় দেখতাম প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে পানের আবাদ হতো। তবে বর্তমানে এর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পুরো এলাকার জুড়ে ৭ থেকে ৮ বিঘা জমিতে গুটি কয়েকজন চাষি পানের চাষ করেন। তিনি আরো বলেন, সরকার পান চাষিদের সহায়তা করলে হয়তো পান চাষে চাষিরা আবারো আগ্রহী হতে পারেন।

স্থানীয় কয়েকজন পান চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পানের বরজে বিঘা প্রতি প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সুন্দরভাবে পরিচর্যা করলে নতুন বরজ থেকে ৬ মাস থেকে পান তোলা যায়। পানের ভাল ফলন ও বাজারে ভাল মূল্য পাওয়া গেলে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মতো বিক্রি আসে।

তারা আরো বলেন, পানের বরজ তৈরি করে পানের লতা লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া পেলেও সার, কীটনাশক ব্যবহারে পানের রোগ ঠেকাতে পারছেন না তারা। রোগবালাই কিংবা সমস্যা দেখা দিলে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা কিংবা ঔষধ বিক্রেতাদের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, এব্যাপারে চাষিরা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কোন পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়না। ফলে অনেক সময় তাদের আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই পানের বরজ বাদ দিয়ে তারা অন্য ফসল ফলানোর দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

একজন স্থানীয় পান চাষি মনোরঞ্জন দত্ত জানান, সরকার কৃষকদের জন্য সারা দেশে বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করলেও পানচাষির কপালে সার-বীজ ও এক বোতল কীটনাশকও জোটে না। কৃষি বিভাগ থেকে যদি পান চাষে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করতেন তাহলে চাষিরা আগ্রহ হারাতেন না। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যেকোনো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার তাদের সহায়তা করে কিন্তু পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষির পাশে কেউ দাঁড়ায় না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আর কেউ এ এলাকায় পান চাষে আগ্রহ দেখাবে না।

এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, উপকূলীয় এলাকা ছাড়া পান চাষের উপর কৃষি বিভাগের কোনো কার্যক্রম নেই। তবে এখানকার পান চাষিরা যে কোন প্রয়োজনে পরামর্শ চাইলে তাদের আমরা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবো বলে তিনি জানান।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানবন্দর থানা পরিদর্শনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন নবীনগরের চাষিরা

বর্তমান সময় : ০৭:৩৯:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

পান বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসবসহ বিয়ে-শাদিতে পান-সুপারির কদর আদিকাল থেকে।পান দিয়ে চলে মেহমানদারীতে আপ্যায়নও। যুগের সাথে অনেক কিছুর চাহিদা কমে গেলেও রসনা বিলাসের অন্যতম এই উপকরণটির চাহিদা বিন্দুমাত্র কমেনি এখনো।

একটা সময় পান চাষের ব্যাপক চাহিদা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায়। এলাকার চাষিরা পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং তারা সফলতার মুখও দেখেন। সময়ের সাথে সাথে এ উপজেলায় পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি প্রণোদনার অভাবে দিন দিন কমে যাচ্ছে পান আবাদের পরিমাণ।

জানা যায়, একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি অপরদিকে চাষিদেরকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সুস্বাদু পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের বহু পরিবার আদিকাল ধরে পান চাষে জড়িত ছিলো। এ পান স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয় ছিল। এর চাহিদাও প্রচুর। সরকারি প্রণোদনা বা সঠিক পরিকল্পনায় এ অঞ্চলে পানের পরিকল্পিত চাষাবাদ ঘুরিয়ে দিতে পারে স্থানীয় পান চাষিদের ভাগ্যের চাকা, এমনকি জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একটা সময় শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীঘর, শাহবাজপুর এবং শ্যামগ্রামে পানের প্রায় ৪০-৪৫ টি পানের বরজ থাকলেও এখন তা কমে বর্তমানে এ এলাকায় মাত্র ৭-৮ টি পানের বরজের দেখা মিলেছে। পূর্ব পুরুষের পেশা হিসেবে এখনো যারা পানের বরজ নিয়ে আছেন তারাও দিন দিন এ পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, একটা সময় দেখতাম আমাদের এলাকায় পান চাষ করতে চাষিরা বেশ আগ্রহ দেখাতো। ঐসময় দেখতাম প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে পানের আবাদ হতো। তবে বর্তমানে এর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পুরো এলাকার জুড়ে ৭ থেকে ৮ বিঘা জমিতে গুটি কয়েকজন চাষি পানের চাষ করেন। তিনি আরো বলেন, সরকার পান চাষিদের সহায়তা করলে হয়তো পান চাষে চাষিরা আবারো আগ্রহী হতে পারেন।

স্থানীয় কয়েকজন পান চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পানের বরজে বিঘা প্রতি প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সুন্দরভাবে পরিচর্যা করলে নতুন বরজ থেকে ৬ মাস থেকে পান তোলা যায়। পানের ভাল ফলন ও বাজারে ভাল মূল্য পাওয়া গেলে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মতো বিক্রি আসে।

তারা আরো বলেন, পানের বরজ তৈরি করে পানের লতা লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া পেলেও সার, কীটনাশক ব্যবহারে পানের রোগ ঠেকাতে পারছেন না তারা। রোগবালাই কিংবা সমস্যা দেখা দিলে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা কিংবা ঔষধ বিক্রেতাদের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, এব্যাপারে চাষিরা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কোন পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়না। ফলে অনেক সময় তাদের আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই পানের বরজ বাদ দিয়ে তারা অন্য ফসল ফলানোর দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

একজন স্থানীয় পান চাষি মনোরঞ্জন দত্ত জানান, সরকার কৃষকদের জন্য সারা দেশে বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করলেও পানচাষির কপালে সার-বীজ ও এক বোতল কীটনাশকও জোটে না। কৃষি বিভাগ থেকে যদি পান চাষে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করতেন তাহলে চাষিরা আগ্রহ হারাতেন না। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যেকোনো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার তাদের সহায়তা করে কিন্তু পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষির পাশে কেউ দাঁড়ায় না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আর কেউ এ এলাকায় পান চাষে আগ্রহ দেখাবে না।

এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, উপকূলীয় এলাকা ছাড়া পান চাষের উপর কৃষি বিভাগের কোনো কার্যক্রম নেই। তবে এখানকার পান চাষিরা যে কোন প্রয়োজনে পরামর্শ চাইলে তাদের আমরা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবো বলে তিনি জানান।