মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আট বছরের শিশুটির বাড়ি গেছেন বিএনপির নেতারা। এ সময় শিশুটির স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
শিশুটির মৃত্যুর পর থেকে শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের পরিবারটিতে চলছে হাহাকার। মেয়েকে হারিয়ে মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ।
বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটিকে দাফনের পর থেকে বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।
শুক্রবার সকালে শিশুটির বাড়িতে যান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এ সময় তার সঙ্গে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলী ছিলেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন আফরোজা। সেইসঙ্গে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশুটির ন্যায় বিচারের পক্ষে মাঠে নেমেছি আমরা।
“আমরা চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। সেইসঙ্গে পরিবারটিকে সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছি। আমাদের দল শিশুটির পরিবারের পাশে আছে।”
পরে শিশুটির বাড়িতে যান মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খান। সেখানে তিনি শিশুটির মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুটির মা বলেন, কয়েক মাস আগে তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীর অসুস্থতার পর থেকে পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। বিএনপি নেতাদের কাছে স্বামীর সুচিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এ সময় শিশুটির বাবার চিকিৎসায় সহযোগিতার করার আশ্বাস দেন বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও দলগতভাবে তাদের সহযোগিতা করব আমরা। শিগগিরই শিশুটির বাবার চিকিৎসা করাতে ঢাকায় পাঠানো হবে।”
বৃহস্পতিবার থেকে শিশুটির বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। শিশুটির এক চাচা বলেন, “শিশুটির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। আগে থেকে জানতে পারিনি ওরা এত খারাপ অবস্থায় আছে।
“আমরা সবাই চাই, বাকি তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে যাতে পরিবারটি ভালো থাকে।”
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৬ মার্চ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। সেই খবরে সারা দেশে তৈরি হয় ক্ষোভ।
এ ঘটনায় শিশুটির মা ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
আসামিরা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনই কারাগারে আছেন।
নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
পরে ৭ মার্চ রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ৮ মার্চ শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর জানিয়েছে।
বিকালে শিশুটির মরদেহ হেলিকপ্টারে করে মাগুরা জেলা স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে এবং পরে তার গ্রামের বাড়ি জারিয়া গ্রামে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
রাত ৮টার দিকে তাকে উপজেলার সোনাইকুণ্ডি গ্রামের দাফন করা হয় বলে সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পান্না খাতুন জানান।