ঢাকা , সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
স্কুলছাত্রীকে ‘হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ’, রিকশায় করে নিয়ে লাশ ফেলা হয় হাতিরঝিলে এবার শেখ হাসিনার ছবি লাগানো ডাস্টবিনে ময়লা ফেললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ রাজউক উত্তরা অফিস মতিঝিলে একিভূত করার আদেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট খাল খনন উদ্বোধনে লাল গালিচা, ব্যাখ্যা দিলো ডিএনসিসি বিএনপির পক্ষ থেকে ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের বিশুদ্ব পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ বগুড়ার শেরপুর শহরে উড়ালসড়ক নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন একুশের টান দুঃসাহসী, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জ্বলন্ত প্রমাণ: প্রধান উপদেষ্টা তৃতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, মানুষের ভোগান্তি ডাস্টবিনে শেখ হাসিনার ছবি, ময়লা ফেললেন প্রেসসচিব সরকারের সহায়তা নিয়ে নতুন দল গঠন করলে জনগণ মেনে নিবে না- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

একুশের টান দুঃসাহসী, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জ্বলন্ত প্রমাণ: প্রধান উপদেষ্টা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • বর্তমান সময় : ০২:০২:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৪ সময় ভিউ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে, প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, এই টান গভীরতর হয়েছে, আমাদের দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছে।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাতকঠোর প্রতিজ্ঞা।’

জুলাইয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে যেসব দুঃসাহসিক ছাত্র-জনতা-শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস।

জুলাই অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ। বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা। একুশ মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া। একুশ মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরও অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের পটভূমিতে আমাদের নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে। বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল, তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহাবিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহাবিস্ফোরণ গণ-অভ্যুত্থানে দেশ পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রথিত করে দিয়ে গেল। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্তা এ প্রত্যয়ে গভীরভাবে গ্রথিত হলো অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।’প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ়বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী-দীর্ঘস্থায়ী—সব দূরত্বের ঊর্ধ্বে। এ জন্য সব ধরনের জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই, যেখানে আমরা স্বস্তি পাই, আমরা শান্তি পাই, আমরা সমাধান পাই, সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে আবার খুঁজে পাই। একুশ আমাদের মানসকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়। মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থান জাতিকে ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত এক দেশকে দ্রুততম গতিতে আবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি নিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রকাশক প্রতিনিধি মো. রেজাউল করিম বাদশা।

এবারের বইমেলায় থাকছে জুলাই চত্বরও। মেলায় বাড়ানো হয়েছে স্টলের সংখ্যা। মেলায় অংশ নিচ্ছে ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৩৫। এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠান। মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নের ৩৬টিই থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে ১টি। মেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলাপ্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

ট্যাগ :
জনপ্রিয় সংবাদ

স্কুলছাত্রীকে ‘হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ’, রিকশায় করে নিয়ে লাশ ফেলা হয় হাতিরঝিলে

একুশের টান দুঃসাহসী, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান জ্বলন্ত প্রমাণ: প্রধান উপদেষ্টা

বর্তমান সময় : ০২:০২:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে, প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, এই টান গভীরতর হয়েছে, আমাদের দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দিয়েছে।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ইস্পাতকঠোর প্রতিজ্ঞা।’

জুলাইয়ের ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে যেসব দুঃসাহসিক ছাত্র-জনতা-শ্রমিক প্রাণ দিয়েছেন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস।

জুলাই অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ। বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা। একুশ মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া। একুশ মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরও অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের পটভূমিতে আমাদের নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে। বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল, তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহাবিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহাবিস্ফোরণ গণ-অভ্যুত্থানে দেশ পাল্টে দিল। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় গ্রথিত করে দিয়ে গেল। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্তা এ প্রত্যয়ে গভীরভাবে গ্রথিত হলো অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।’প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ়বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী-দীর্ঘস্থায়ী—সব দূরত্বের ঊর্ধ্বে। এ জন্য সব ধরনের জাতীয় উৎসবে, সংকটে, দুর্যোগে আমরা শহীদ মিনারে ছুটে যাই, যেখানে আমরা স্বস্তি পাই, আমরা শান্তি পাই, আমরা সমাধান পাই, সাময়িকভাবে অদৃশ্য ঐক্যকে আবার খুঁজে পাই। একুশ আমাদের মানসকে এভাবে তৈরি করে দিয়েছে। একুশ আমাদের পথ দেখায়। মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থান জাতিকে ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত এক দেশকে দ্রুততম গতিতে আবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করার প্রস্তুতি নিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রকাশক প্রতিনিধি মো. রেজাউল করিম বাদশা।

এবারের বইমেলায় থাকছে জুলাই চত্বরও। মেলায় বাড়ানো হয়েছে স্টলের সংখ্যা। মেলায় অংশ নিচ্ছে ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৩৫। এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠান। মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নের ৩৬টিই থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে ১টি। মেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলাপ্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।