ভৈরব প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আধিপত্যের কারণে ধ্বংসের মূখে আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। ফলে প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। এক সময়ে সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত হয়েছিল এই বিদ্যালয়টি। লুন্দিয়া গ্রামের দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্বের জেরে এই বিদ্যালয়টি আজ ধ্বংসের পথে। ফলে কাগজে কলমে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক হলেও বিধি মোতাবেক নিয়োগ নেই কোন শিক্ষক। আর এ কারণে বিদ্যালয়টির উন্নতি বদলে হচ্ছে অবনতি। এদিকে স্থানীয়দের দাবি বিদ্যালয়টি সংস্কারের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করে নিম্নমাধ্যমিক থেকে হাইস্কুলে রূপান্তর করা হলে যেতে হবে না গ্রাম থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে শিক্ষার জন্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে নেই কোন সাইন বোর্ড, চোখে পড়েনি শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হবে পরিত্যক্ত বাড়ির গোয়াল ঘর। বিদ্যালয় মাঠের মধ্যে গোবরের চটা ও ধানের খড়ের গাদা থাকায় নেই কোনো শিক্ষার পরিবেশ। তারপরও এটি একটি নিম্ব মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দুটি টিনশেড ঘরে চারটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে অফিস হিসেবে। বাকি তিনটি কক্ষে কিছু টেবিল চেয়ার রয়েছে যার মধ্যে বেশির ভাগই পরিত্যক্ত বা নষ্ট। যদিও প্রতিটি রুমেই হয়ে আছে ভুতুড়ে পরিবেশ।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, ২০০৪ সালে ৫৩ শতাংশ জায়গা নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর ২০১৪ সালে পাঠদানের স্বীকৃতি পায় বিদ্যালয়টি। শুরুতে বিদ্যালয়টিতে লুন্দিয়া সহ পাশ^বর্তী গ্রামের ৩৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে আরো দশ বছর। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ২০ বছরেও হয়নি উন্নয়ন ও এমপিওভুক্ত।বর্তমানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে রয়েছে ৩৬ জন, ৭ম শ্রেণিতে ২৪ জন ও ৮ম শ্রেণিতে রয়েছে ২৮ জন শিক্ষার্থী। ৫ জন শিক্ষক নিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। বিধিমোতাবেক নিয়োগ না থাকায় শিক্ষকরা পাচ্ছেন না বেতন ভাতা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী তৃষা, শুভা ও মারুফ জানান, আমরা যখন বিদ্যালয়ে পড়া লেখা করেছি তখন এখানে কয়েক শতাধিক ছাত্র ছাত্রী ছিল। শিক্ষার মান ছিল মানসম্মত। এলাকায় ঝগড়ার কারণে বিদ্যালয় ধ্বংসের পথে। এখন বিদ্যালয়ে পাঠদানের কোনো পরিবেশ নাই। দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা ৪ কিলোমিটার হেঁটে অন্য স্কুলে যেতে হচ্ছে। আমরা চাই এই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে উন্নয়ন করে হাইস্কুলে রূপান্তর করা হোক।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তাজুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গ্রামে গ্রামে গিয়ে ছাত্র ছাত্রী এনেছিলাম। এলাকার আধিপত্যের কারণে বিদ্যালয়টি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ঝড় তুফান হলে বিদ্যালয়টি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। এই বিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে অন্যান্য বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতো। আজ সেই বিদ্যালয়গুলো এমপিও ভুক্ত হলেও আমাদের বিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়নই নেই।
এ বিষয়ে লুন্দিয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষিকা ইসরাত জাহান বলেন, আমরা ৫ জন শিক্ষক নিয়ে বিদ্যালয়টি চালাতে হচ্ছে। আমরা ৬ মাস যাবত কোনো বেতন পাচ্ছি না। এদিকে ছাত্রছাত্রীদের কোনো সুযোগ সুবিধা দিতে না পারায় দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমরা শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারবো।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, আধিপত্যের কারণে বিদ্যালয়টি এগিয়ে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয়েছে। কোন রকম টিকে আছে বিদ্যালয়টি। বর্তমানে আধিপত্যের কোন সুযোগ নেই। সরকার চাইলে এমপিওভুক্ত হলে বিদ্যালয়টি আগের রূপে ফিরে আসবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর আলম বলেন, কোন রকম টিকে আছি বিদ্যালয়টি নিয়ে। এক সময় লুন্দিয়া, খলাপাড়া ও চরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সাড়ে তিনশতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। এলাকার বংশীয় দ্বন্দ্বে বেশ কিছু দিন বিদ্যালয়টি বন্ধ ছিল। এখন আবার বিদ্যালয়ে শিক্ষা কর্যক্রম শুরু হয়েছে। লুন্দিয়া ৪টি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। ওইসব বিদ্যালয় থেকে বছরে ২ শতাধিক ছাত্রছাত্রী বের হয়। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি ঠিক না থাকায় কোনো শিক্ষার্থী এখানে ভর্তি হতে চায় না। সরকারের নজরদারি থাকলে বিদ্যালয়টি আগের রূপে ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল হোসেন বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিদ্যালয়টি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েও কেন এত দিন এমপিওভুক্ত হয়নি তা আমার বোধগম্য নয়। এই বিদ্যালয়ে বিধি মোতাবেক কোনো শিক্ষক কর্মচারী নেই। ৮৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলটি জরাজীর্ণ অবস্থা। এখানে শিক্ষার কোন পরিবেশ নাই। আমি এখনো বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করিনি। তবে যতটুকু জেনেছি এলাকার আধিপত্যের কারণে বিদ্যালয়ের বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো রকম উন্নয়ন কাজ হয়নি। শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিবো। আমি চাই আগে স্কুলটি আধিপত্য মুক্ত হোক। তাহলেই শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন জানান, বিদ্যালয়টির বিষয়ে আমার জানা ছিল না। যেহেতু এ প্রতিনিধির মাধ্যমে জেনেছি আমি বিদ্যালয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো।