সংবিধান সংশোধনের আগেই বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নিয়োগদানে প্রধানমন্ত্রীর একচেটিয়া ক্ষমতা থাকছে না। সম্প্রতি সংবিধান সংশোধন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলবে।
এদিকে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগে ইতোমধ্যে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন একটি স্বাধীন বিচারক নিয়োগ কমিশন (জেএসি) গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কমিশন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ বিচারকদের নেতৃত্বে বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করবে, ফলে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ কমবে। এটি মূলত সংবিধান সংশোধন না করেই কার্যকর করা হবে।
অন্যদিকে, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগেও পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও সুস্পষ্ট এবং সরকারের সুপারিশের ভিত্তিতে করা হবে। এ ছাড়া, অন্যান্য সাংবিধানিক পদ যেমন নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা কমিয়ে সমতা আনার জন্য নতুন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন করার সুপারিশ। প্রস্তাবিত ৯ সদস্যের কাউন্সিলের সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্ন ও উচ্চকক্ষের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত দুই কক্ষের ডেপুটি স্পিকার, সংসদের অন্যান্য দল থেকে একজন সদস্য।
এনসিসির পাঠানো নাম থেকে নির্বাচন কমিশনার, দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।
এ পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমবে এবং সরকারের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিছু রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও জামায়াতে ইসলামী এসব সুপারিশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।