ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে তাঁরা ৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়েছেন। এই সময়ে মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
গতকাল রোববার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি তুলে ধরে এসব কথা বলা হয়।
ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারের সামনে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইডেন কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার। তিনি ৬ দফা দাবি পড়ে শোনান।
৬ দফা দাবিগুলো হলো—
১. ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্য হামলাসহ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা-পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় এসি-ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কর্তৃক ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসির সদস্য ও ঢাবির উপাচার্যের সমন্বয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সঙ্গে তাৎক্ষণিক উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট এলাকায় সিটি করপোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি পূরণে ৪ ঘণ্টার আলটিমেটামের কথা ঘোষণা করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সজিব উদ্দিন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, চার ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ঢাকা কলেজের ছাত্র আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা আজ সকালে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সড়ক অবরোধ করিনি। চার ঘণ্টার মধ্যে ৬ দফা দাবির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না দেখলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এই পরিস্থিতিতে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আজ বৈঠক করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়সংলগ্ন লাউঞ্জে এই বৈঠক চলছে।
বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, সহ-উপাচার্য মামুন আহমেদ ও সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ রয়েছেন৷ সাত কলেজের পক্ষে আছেন কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা৷
গতকাল রোববার রাতে নীলক্ষেত মোড় এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এই বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে হামলায় জড়িত সবার বিচারের দাবিতে আজ সকাল ৯টা থেকে নিজ নিজ কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন না ৬ দফা দাবি দিয়ে তা পূরণের জন্য ঘণ্টা সময় বেধে দিলেন।
এই পরিস্থিতিতে আজ ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের আজকের সব চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করতে গেলে গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ সাত কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে অপমান করেন বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। এ ঘটনায় তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যা থেকে সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসেন। নীলক্ষেত মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে তাঁদের ধাওয়া দেন। এতে নীলক্ষেত মোড় থেকে কিছুটা সরে যান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা আবার একজোট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। পাল্টাপাল্টি এ ধাওয়া চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করতে মাঝে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ সময় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরে পুলিশকে সহায়তা করতে চার প্লাটুন বিজিবিও মোতায়েন করা হয়।
একপর্যায়ে নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন। পরে রাত পৌনে তিনটার দিকে অবস্থান ছেড়ে নিজেদের ক্যাম্পাসে ফিরে যান। রাত তিনটার দিকে সাত কলেজের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি (সড়ক অবরোধ) ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন তাঁরা।